প্রকাশিত: ০১/১২/২০১৪ ৯:৫২ অপরাহ্ণ

images4
মাহমুদুল হক বাবুল::
কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ও শরণার্থী শিবিরকে দীর্ঘদিন ধরে আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছে রোহিঙ্গা জঙ্গি ক্যাডারেরা। সাধারণ রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে ওই সব জঙ্গি ক্যাডারেরা চরম নির্যাতন করে থাকে। রোহিঙ্গাদের আর্থিক মানবতার সেবার কথা বলে বিদেশী এনজিও সংস্থার নিকট থেকে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সংঘঠিত করতে কোটি কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে ব্যবহার করছে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হিসেবে। ২ শতাধিক রোহিঙ্গা জঙ্গি ক্যাডার সক্রিয় থাকলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আছড় লাগেনি তাদের গায়ে। এসব রোহিঙ্গা জঙ্গিরা খুন, রাহাজানি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী কুতুপালং গ্রামের এক প্রভাবশালী মৌলভী ওই সব রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগিতার কথা বলে বিদেশী এনজিও সংস্থার নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা আতœসাত করেছে বলে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তির সেক্রেটারী মাষ্টার রাকিব উল্লাহ জানিয়েছেন। পুলিশ ওই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাধারণ রোহিঙ্গারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কক্সবাজার ৬নং গাড়ির মাঠ এলাকা থেকে মুক্তি সংগঠনের কার্যালয় থেকে আটক হওয়া ১৩ জনের মধ্যে ১২ জন রোহিঙ্গা। আটক হওয়া ওই রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শীর্ষ জঙ্গিনেতা হাফেজ নঈম উল্লাহ ও আবু ছিদ্দিক ও জঙ্গি ছিদ্দিকের নেতৃত্বে দেশের নাশকতা সৃষ্টি ও গ্রেপ্তার এড়াতে স্থানীয় প্রভাবশালী এক মৌলভীর নির্দেশে দফায় দফায় গোপন বৈঠক হয় বলে ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে। শুধু তাই নয় ওই মৌলভী জঙ্গিদেরকে গ্রেপ্তার এড়াতে ও প্রশাসন ম্যানেজ করতে প্রায় কোটি টাকা লাগবে বলে নির্দ্দেশ দেন। ওই সব জঙ্গিরা পুলিশের হাতে আটক রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানিজেশন এআরএনও সহ-সভাপতি কালাদন প্রেসের সম্পাদক আবু তাহের, মহেশখালীর মানুন ও কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা জঙ্গি মাষ্টার ইকবাল। অন্য ১০ জনের মধ্যে ৩ জন কুতুপালং রেজিষ্ট্রাট ক্যাম্পের জি-ব্লকের বাসিন্দা নূরুল ইসলাম, আনছার উল্লাহ ও ইয়াসমিন আক্তার। অন্য ৭ জন কুতুপালং আনরেজিষ্ট্রাট ক্যাম্পের রোহিঙ্গা ইলিয়াছ, কামাল, আনিসুল মোস্তফা, হাছিনা বেগম, জেসমিন আক্তার ও জন্নাত আরা। তারা রোববারে কক্সবাজার মুক্তি সংগঠনের জঙ্গি সংগঠনের অর্থায়নে পরিচালিত কুতুপালং ক্যাম্প স্কুলের মাসিক বেতনের টাকার জন্য গেলে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। কক্সবাজার পুলিশের হাতে আটক রোহিঙ্গা জঙ্গি মাষ্টার ইকবাল ২০১৩ সালে উখিয়া থানা পুলিশের হাতে আটক হলে তার বিরুদ্ধে বিদেশী নাগরিক আইনে মামলা রুজু করা হয় উখিয়া থানায়। সেই বাংলাদেশী নাগরিকত্বের আইডি কার্ড দেখিয়ে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে।

গত রোববার বিকেলে কক্সবাজার পুলিশ গাড়ির মাঠ এলাকা থেকে রোহিঙ্গা জঙ্গি (আরএনও) আরকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানিজেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রোহিঙ্গা ভিত্তিক চট্টগ্রাম কালাদন প্রেসের সম্পাদক আবু তাহের ওরফে পিন্টু ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড কুতুপালং ক্যাম্পে বসবাসকারী মাষ্টার ইকবাল ও মহেশখালী উপজেলার মামুন সহ ১৩ জনকে সদর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাদের নিকট থেকে পুলিশ ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদি উদ্ধার করেছে। গাড়ির মাঠ এলাকার মুক্তি সংগঠনের কার্যালয়ে জঙ্গিদের নিয়ে বৈঠককালে পুলিশ এ অভিযান পরিচালনা করেন। তারা ইত্তেহাদুল জমিয়াতুল রোহিঙ্গা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বিদেশী এনজিও সংস্থা থেকে কোটি কোটি টাকার ফান্ড সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের নিয়ে আরকান রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করে আসছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের গোয়েন্দা পুলিশের হাতে খুলশী থানার জিইসি মোড় হোটেল লর্ডস ইন থেকে আটক হয় পাকিস্তানী নাগরিকসহ ৫ জঙ্গি। এরপর নাইক্ষ্যংছড়ির ৫০ ব্যাটলিয়নের বিজিবির সদস্যরা মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক জঙ্গি নেতা সালামত উল্লাহর শ্যালক হাফেজ জোনাইদকে গ্রেপ্তার করে। চট্টগ্রামে পুলিশের হাতে আটক হওয়া পাকিস্তানী রোহিঙ্গা সংগঠন গুলোবল রোহিঙ্গা সংগঠনের নেতা মোঃ আলম সম্প্রতি কুতুপালং ক্যাম্পে এসে রোহিঙ্গা সংগঠনকে সক্রিয় করতে স্থানীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এক মৌলভীর বাড়িতে গোপন বৈঠক করেছিল বলে জানা গেছে।

জানা গেছে চট্টগ্রাম শহরে সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের হাতে খুলশী থানার জিইসি মোড় হোটেল লর্ডস ইন থেকে আটক হয় ৫ জঙ্গি নেতা। ওই সময় পাকিস্তানের করাচি বাসিন্দা মোঃ আলম (৪৫), মোঃ আমিন (৫০), আব্দুল মজিদ (৩০), কক্সবাজারের জঙ্গিনেতা শেখ সালামত উল্লাহ (৪৫)সহ ৫ জন আটক হয়। কুতুপালং শরণার্থী শিবির ঘুরে জানা যায়, কক্সবাজারের ঝিলিংজা এলাকায় ইসলামিক সেন্টারের নামে জঙ্গি নেতা রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সামরিক উপদেষ্ঠা সালাউল ইসলামের আর্থিক সহযোগিতায় উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া লেদা ক্যাম্পে ৩ শতাধিক জঙ্গি ক্যাডার মাসিক ভিত্তিক অর্থের বিনিময়ে ইত্তেহাদুল রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনের নামে বিদেশী বিভিন্ন এনজিও সংস্থার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে। ওই সব জঙ্গিরা রোহিঙ্গাদের অত্যচার নির্যাতনের কথা বলে গত রোববার কক্সবাজার পুলিশের হাতে আটক হওয়া চট্টগ্রামে বসবাসকারী ইত্তেহাদুল জঙ্গি সংগঠনের নেতা কালাদন প্রেসের সম্পাদক রোহিঙ্গা ভিত্তিক সংবাদ সংস্থার আবু তাহের বহিঃ বিশ্বে ভিডিও চিত্র প্রকাশ করে থাকেন। কুতুপালং ক্যাম্পের বি ব্লকের বসবাসকারী ইত্তেহাদুল জঙ্গি সংগঠনের নেতা মাষ্টার ছৈয়দ হোছন, ই ব্লকের মাষ্টার মনির ও নয়াপাড়া ক্যাম্পের আমান উল্লাহ কক্সবাজার ডিজিটাল হাসপাতালের পাশে ইত্তেহাদুল জঙ্গি সংগঠনের কার্যালয়ে জঙ্গি তৎপরাতা চালিয়ে থাকে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, কুতুপালং আনরেজিষ্ট্রার ক্যাম্পের পুলিশের হাতে আটক হওয়া রোহিঙ্গা মাষ্টার ইকবাল জঙ্গি সংগঠনের অর্থায়নে ৬০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। সে সম্প্রতি বাংলাদেশী পার্সপোট ব্যবহারকরে সৌদি আরবে পাড়ি দিয়ে ছিল। একই ক্যাম্পের হাবিবুর রহমানের ছেলে জঙ্গিনেতা ছৈয়দ আহমদ ১০ দিন আগে বাংলাদেশী পার্সপোট ব্যবহার করে সৌদি আরবে গিয়ে ওখানে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা জঙ্গিনেতাদের সাথে বৈঠক শেষে কুতুপালং ক্যাম্পে ফিরে আসেন। নয়াপাড়া ক্যাম্পের মৌলভী হোছন কুতুপালং এফ ব্লকে বর্তমানে অবস্থান করছে। ইত্তেহাদুল জঙ্গি সংগঠনের নামে দায়িত্বপালন করছেন কুতুপালং ক্যাম্পের বি ব্লকের হাফেজ নঈম, জি ব্লকের মৌলভী শফি, আনরেজিষ্ট্রাট মোঃ নূর, জি ব্লকের আবুল ছালে, আবু ছিদ্দিক ওরফে জঙ্গি ছিদ্দিক, মনিরুজ্জামান, মাষ্টার ফখরুল ইসলাম, আনোয়ার সাদেক, হাফেজ জালাল উদ্দিন, হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া শামশুল আলম, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগার আবু আব্দুল্লাহ, কক্সবাজার পাহাড়তলী এলাকার মৌলভী আবু ছালে, উখিয়া মনখালীর জোবাইর, শাপলাপুরের ডাঃ খাইরুল আমীন, মৌলভী আজিজ। এসব জঙ্গিনেতারা রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত না যেতে উৎসাহ যোগাচ্ছে বলে কুতুপালং এলাকার বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক জানিয়েছেন। সূত্রে জানা যায়, কুতুপালং শরণার্থী শিবির থেকে রিসেটেলম্যান্ট হওয়া অষ্টলিয়ায় অবস্থানকারী খালেদ ও ক্যাম্প থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাওয়া সৌদি আরবে অবস্থানকারী খালেদ ও রোহিঙ্গাদের পিছনে জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হওয়া কক্সবাজারের রোহিঙ্গা জঙ্গিদের শীর্ষ নেতা শেখ সালামত উল্লাহ রোহিঙ্গাদের আর্থিক মানবেতর সেবার নামে কোটি কোটি হাতিয়ে নিয়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম শহরে নামে বেনামে জায়গা জমি ক্রয় করে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করছেন অনেকেই। কুতুপালং ক্যাম্প পুলিশের আইসি শহিদুল হক রেজিষ্ট্রাট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গি তৎপরতার কোন খবর তার কাছে নেই বলে দাবী করেন। তবে রোহিঙ্গা বস্তি এলাকায় কি হচ্ছে না হচ্ছে আমার জানা নেই।

পাঠকের মতামত

সফরে বিনোদনের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে উখিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা

সফরে বিনোদনের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে উখিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা

পলাশ বড়ুয়া:: উখিয়া কলেজের বার্ষিক শিক্ষা সফর-২০২৫ সম্পন্ন হয়েছে আজ। নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে প্রায় ...